Smart Date (BN/EN)
লোড হচ্ছে...

দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক অগ্নিকাণ্ড-নিরাপত্তা নাকি নাশকতা?

গত কয়েক মাসে দেশে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যা সাধারণ দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত নাশকতা—এই প্রশ্ন সমাজের বিভিন্ন স্তরে আলোচনা তৈরি করেছে। এই ধরনের ঘটনা শুধু প্রাণহানি বা আর্থিক ক্ষতি ঘটায় না, বরং মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি এবং আতঙ্কও সৃষ্টি করে। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক, এবং এগুলোর বিশ্লেষণ, তদন্ত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার মূল্যায়ন এখন অপরিহার্য।
২০২৫ সালের ২১ জুলাই দুপুর ১টা ৬ মিনিটে রাজধানীর উত্তরায় দিয়াবাড়ি এলাকায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়নের মাত্র ১২ মিনিটের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুলের ভবনে আছড়ে পড়ে। এতে ৩৬ জন নিহত হন, যার মধ্যে ২৭ জন শিক্ষার্থী। বিমানটি রুটিন উড্ডয়ন করছিল, কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটি বা নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণে এটি স্কুল ভবনে আছড়ে পড়ে। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকরা মুহূর্তেই আতঙ্কে পড়ে যান। উদ্ধারকার্য চালাতে ফায়ার সার্ভিস ও মেডিকেল টিম কাজ শুরু করে, কিন্তু সব হতাহতকে তৎক্ষণাৎ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
প্রাথমিকভাবে বিমান বাহিনী দুর্ঘটনাটিকে যান্ত্রিক ত্রুটি বা পাইলটের নিয়ন্ত্রণ হারানোর সঙ্গে যুক্ত বলে জানিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে ব্ল্যাক বক্স বিশ্লেষণ, বিমান রক্ষণাবেক্ষণ রেকর্ড এবং বিমান পরিচালনার পদ্ধতি পরীক্ষা করা অপরিহার্য। এছাড়া, দুর্ঘটনার সঙ্গে নাশকতা বা তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা আছে কি না, তা জানতে সরকারকে পূর্ণাঙ্গ এবং স্বচ্ছ তদন্ত করতে হবে।
ঢাকার এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চট্টগ্রামের ইপিজেডে একটি গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে কারখানার ভবন, কাঁচামাল এবং উৎপাদন সরঞ্জাম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েকজন শ্রমিক আহত হন। ফায়ার সার্ভিস তৎক্ষণাৎ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে, তবে সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতি এখনও মূল্যায়ন করা হচ্ছে। শ্রমিক সংগঠনগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত নাশকতা হতে পারে। তারা দাবি করেছে, কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে বৈদ্যুতিক ত্রুটি, অগ্নি নিরাপত্তার অবহেলা এবং পরিকল্পিত নাশকতার সম্ভাবনা রয়েছে। একাধিক অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে সাদৃশ্য থাকলে, এটি কেবল দুর্ঘটনা নয়, একটি পরিকল্পনার অংশও হতে পারে।
২০২৫ সালের ১৮ অক্টোবর, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৬টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। সাময়িকভাবে বিমান চলাচল স্থগিত করা হয় এবং কিছু ফ্লাইট বিকল্প রুটে পাঠানো হয়। আগুনে কার্গো ভবনের সরঞ্জাম ও মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগুনের প্রকৃত কারণ নির্ধারণের জন্য সিসিটিভি ফুটেজ, নিরাপত্তা তদারকি এবং কার্গো রেকর্ড পরীক্ষা করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সাম্প্রতিক সময়ের অগ্নিকাণ্ডের তালিকা দেখলে বোঝা যায়, এই ধরনের ঘটনা ক্রমবর্ধমান এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ঘটছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র দুর্ঘটনার চক্র নয়, কখনো কখনো এটি পরিকল্পিত নাশকতার অংশও হতে পারে। সাম্প্রতিক কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে সাদৃশ্য দেখা যায়, যা নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং পরিকল্পিত কার্যক্রমের ইঙ্গিত দিতে পারে। তবে এই সংযোগ নিশ্চিত করতে স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত অপরিহার্য।
সরকার ইতিমধ্যেই তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে। রাজনৈতিক নেতারা ও সাধারণ জনগণ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, সম্প্রতি দেশে একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার মূল কারণ উদ্ঘাটনের জন্য পূর্ণাঙ্গ এবং স্বচ্ছ তদন্ত অপরিহার্য। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, ফায়ার সার্ভিস ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে, এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, নয়তো সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি আরও বৃদ্ধি পাবে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। স্কুল, কারখানা ও বিমানবন্দর—সব জায়গাতেই নিরাপত্তার দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। শ্রমিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করার দাবি করেছে। মিডিয়া ও সাংবাদিকরা নিয়মিত পরিস্থিতি রিপোর্ট করছে, যা জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করছে। তবে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ভ্রান্ত তথ্য বা অতিরিক্ত আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না।
সম্প্রতি দেশজুড়ে একাধিক অগ্নিকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, এগুলো কি নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত নাশকতা। উপসংহার হিসেবে বলা যায়, স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত অপরিহার্য। দায়ীদের সুষ্ঠু বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনঃমূল্যায়ন ও জোরদারকরণ অপরিহার্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প এলাকা ও বিমানবন্দরে অগ্নি নিরাপত্তা মান উন্নয়ন করতে হবে। সরকারী ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে একত্রে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রস্তুতি কার্যক্রম চালাতে হবে।
এ ধরনের ঘটনা শুধু প্রাণহানি ও অর্থনৈতিক ক্ষতি ঘটায় না, বরং জাতির নিরাপত্তা ও মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ণ করে। সরকার, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং সমাজের প্রত্যেক অংশকে একসাথে কাজ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয় প্রতিরোধ করা যায়।
Scroll to Top